গদখালীতে এক দিনেই কোটি টাকার গোলাপ বিক্রি

ভোরের অন্ধকার কেটে তখনো ঠিকমতো আলোর দেখা মেলেনি। এরই মধ্যে হাজারখানেক গোলাপ নিয়ে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী পাইকারি ফুলের মোকামে হাজির হয়েছেন ফুলচাষি মতিয়ার রহমান। ফুলের বাজার ততক্ষণে জমে উঠেছে। মতিয়ার রহমানের মুখেও চওড়া হাসি। কারণ, মতিয়ার ২২ টাকা দরে প্রতিটি গোলাপ (ক্যাপ ছাড়া) বিক্রি করছেন। এ ছাড়া ক্যাপসহ গোলাপ বিক্রি করছেন ১০ টাকা দরে। মতিয়ারের দাবি, এর আগে কখনো এই বাজারে ২২ টাকায় গোলাপ বিক্রি হয়নি।

যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুনকে কেন্দ্র করে আজ রোববার এক দিনেই গদখালী পাইকারি ফুলের বাজারে অন্তত এক কোটি টাকার গোলাপ কেনাবেচা হয়েছে। চাহিদা বাড়ায় আজ রেকর্ড পরিমাণ দামে গোলাপ বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।

ফুলের ভালো দাম পেয়ে মতিয়ার রহমানের মতো ফুলচাষিরা বেশ খুশি। মতিয়ার বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগে গদখালী বাজারে বরাবরই গোলাপের চাহিদা বেশি থাকে। কৃষকদেরও বাড়তি প্রস্তুতি থাকে। চলতি বছরের মধ্যে আজ এই বাজারে সবচেয়ে বেশি গোলাপ ফুল উঠেছে। দামও চড়া। ক্যাপ ছাড়া প্রতিটি গোলাপ ২০ থেকে ২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে গোলাপের এত দাম এর আগে কখনো পাওয়া যায়নি।

Read More:_গদখালীতে এক দিনেই কোটি টাকার গোলাপ বিক্রি

আজ ভোরে গদখালী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সাইকেলের পেছনের গোলাপ ফুল বেঁধে নিয়ে কৃষকেরা দলে দলে বাজারে আসছেন। ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ও মোটরসাইকেলেও অনেকে ফুল নিয়ে মোকামে আসছেন। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে গদখালী বাজার বসে। বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা, গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপারীরা ফুল কিনতে এই বাজারে আসেন। ফুল কেনার পর ব্যবসায়ীরা বাসের ছাদে, ইঞ্জিনচালিত তিন চাকার যান ও পিকআপ ভ্যানে ফুলগুলো বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন। সকাল ১০টার মধ্যেই এই হাটের বেচাকেনা শেষ হয়ে যায়।

স্থানীয় ফুলের ব্যাপারী হযরত আলী বলেন, তিন ধরে গোলাপে দাম চড়া যাচ্ছে। আজ ক্যাপ ছাড়া গোলাপ ২০ থেকে ২২ টাকা, ক্যাপ পরানো গোলাপ ৮ থেকে ১০ টাকা দরে কিনতে হলো। অথচ পাঁচ দিন আগেও গোলাপের পাইকারি দাম ছিল প্রায় অর্ধেক। তখন ১০ থেকে ১২ টাকায় ক্যাপ ছাড়া গোলাপ পাওয়া গেছে। ক্যাপ পরানো গোলাপের দাম ছিল ৫ থেকে ৬ টাকা। আগামী আরও দুই দিন এমন চড়া দাম থাকবে।

গদখালী ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, আজ এক দিনেই গদখালী বাজার ও গোলাপের খেত থেকে অন্তত ১০ লাখ গোলাপ সারা দেশে পাঠানো হয়েছে। ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন উদ্‌যাপনে গোলাপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ ছাড়া জারবেরা, রজনীগন্ধাসহ অন্যান্য ফুলের চাহিদাও কম নয়। আজ সকালে জারবেরা প্রতিটি ৭ থেকে ১২ টাকা, রজনীগন্ধা ১২ টাকা, গ্ল্যাডিওলাস ১৪ থেকে ১৮ টাকা, জিপসি প্রতি মুঠো ৫০ টাকা ও কামিনী পাতা প্রতি মুঠো ২০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া গাঁদা ফুল প্রতি হাজার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন গাঁদা ফুলের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকলেও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই ফুলের চাহিদা বাড়বে।

যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন ঘিরে গত পাঁচ দিনে ঝিকরগাছার গদখালী ফুলবাজার ও পানিসারা এলাকা থেকে অন্তত তিন কোটি টাকার গোলাপ ফুল সারা দেশে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে আজ এক দিনেই সারা দেশে পাঠানো হয়েছে অন্তত এক কোটি টাকা মূল্যের গোলাপ। বর্তমানে যশোর জেলার ১২টি ইউনিয়নে ১২০০ থেকে ১৫০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *